
থানা সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী পটিয়ার ছাত্ররা জুলাই দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পটিয়া শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন। অনুষ্ঠান শেষ করে থানার মোড়ের দিকে গেলে সেখানে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর দে’র নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে জড়ো হতে দেখে। সন্দেহজনক আচরণ ও নাশকতা সন্দেহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে এগিয়ে গেলে দিপংকর ছাড়া অন্যরা দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় দিপংকরকে ধরে স্লোগান দিতে দিতে থানায় নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এতে পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর ব্যাপক লাঠি চার্জ করে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে রাত ১২টার দিকে আবারো বিক্ষোভ করতে থানার সামনে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সে সময় ফের লাঠিচার্জ করে পুলিশ। দুই দফায় পুলিশের লাঠিচার্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আশরাফুল ইসলাম তৌকির (২১), মো. নাদিম (২১), মো. আয়াস (১৬), মো. আকিল (১৮), মো. ইরফান উদ্দিন (১৮), তাসরিয়ান হাসান (১৮), মো. রায়হান উদ্দিন (২০), সাইফুল ইসলাম (১৭), জাহেদুল করিম শাহী (১৮), মুনতাসির আহমদ (১৭), সাইফুল ইসলাম (১৮) গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি জানান, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে শিক্ষার্থীরা থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পটিয়া থানার ওসি জাহেদ নুরের নেতৃত্বে অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যরা বিনা উস্কানিতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে ২৪ সালের জুলাই ফিরে এসেছে। ওসিকে প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে সকাল থেকে থানা ঘেরাও ও আরাকান সড়ক অবরোধের কর্মসূচি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালানোর পাশাপাশি আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পটিয়ার একজন বিএনপি নেতা জানান, পটিয়া থানাও ওসি জাহেদ নুর নিজেকে বিএনপি সমর্থক পুলিশ হিসেবে প্রকাশ্যে পরিচয় দেন। অথচ আওয়ামী লীগ আমলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার ওসি থাকা অবস্থায় তার হাতে অনেক বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টে বিএনপি সাজলেও মূলত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শেল্টার দেন। গত ৮ মাস ধরে তিনি পটিয়া থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের শীর্ষ কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেননি তিনি। আর এই কারণেই অন্যান্য এলাকার আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পটিয়ায় এসে আত্মগোপন করে আছেন।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো ঘটনাটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। রাতে থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কারো অতিউৎসাহী ভূমিকা থাকলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।
পাঠকের মতামত